Labels

Main Tags

জুই ও পলাশের প্রেম – পর্ব ৫

সত্য প্রেম, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর পথে ফিরে আসার এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প – জুই ও পলাশের আবেগঘন প্রেমের পর্ব ৫ এখন পড়ুন সম্পূর্ণভাবে।




মাইলস্টোন ট্রাজেডি





জুই ও পলাশের প্রেম – পর্ব ৫



🔖 শিরোনাম: শেষ বৃষ্টির আগে কিছু না বলা কথা 



🌧️ একটানা বৃষ্টি আর কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়...


শহরের আকাশ আজ হঠাৎ করেই ভারী হয়ে উঠেছে। সকালবেলা সূর্যের আলো যেমন ছিল প্রশান্ত, বিকেলে তার ঠিক উল্টো – একরাশ কালো মেঘ শহরের উপর ছায়া ফেলেছে। যেন প্রকৃতি নিজেই আজ বিষণ্ন। জুইয়ের মনের মতো।
প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল পলাশের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ তো দূরে থাক, সে যেন হারিয়ে গেছে জুইয়ের জীবন থেকে।
একদিন যাকে ছাড়া একটা সকাল কল্পনা করা যেত না, আজ তার অস্তিত্বই যেন প্রশ্নবিদ্ধ।
এই শহরের প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি মোড়, এমনকি সেই ছোট চায়ের দোকানটাও – সব কিছু যেন আজও পলাশের নাম ধরে জুইকে ডাকে।
কিন্তু জুই চুপ। জবাব দেয় না।



---

🌿 জীবন কি শুধুই ভালোবাসা?


প্রেম কখনো কখনো এমন এক যন্ত্রণার নাম হয়ে দাঁড়ায়, যেটা বোঝানো যায় না কারো কাছে।

ভালোবাসা কি কেবল ভালো থাকা?
না, সেটা কখনোই না।
ভালোবাসা মানে কখনো কখনো কষ্ট নিয়েও হেসে থাকা, আবার কখনো ত্যাগের নাম।

জুই যখন প্রথমবার পলাশকে দেখে, তখন ক্লাস টেনের ছাত্রী। পলাশ তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন জুই যেতো কোচিংয়ে, আর পলাশ অপেক্ষা করতো রাস্তার এক কোনায়। দুজনের চোখাচোখি, অল্প হাসি, কিছু ইশারা – এভাবেই শুরু।

সে যে চোখের ভাষা, তা আজকের দিনে হারিয়ে গেছে হাজারো কষ্টে।


---

🕰️ কিছু অতীত, কিছু ভুল, কিছু না বলা কথা...


জুই একদিন বলেছিল পলাশকে,
“ভবিষ্যতে যদি আমার বাবা-মা তোকে না মেনে নেয়, তুই কী করবি?”

পলাশ হেসে বলেছিল,

“তাদের মেনে নিতেই হবে, কারণ আমি তোকে ছাড়া থাকব না।”

কিন্তু সময় একদিন সেই কথা ভুলিয়ে দিল। পলাশের পরিবার জুইকে না মেনে নেওয়ায় সে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়। একটা সময় এসে ফোন ধরা বন্ধ, চ্যাটের রিপ্লাই বন্ধ – যেন সবকিছু কেটে গেল।

জুই বারবার চেষ্টা করেছে বোঝাতে –
“তুই যদি আমার পাশে থাকিস, আমি সব কিছু পারবো। কিন্তু তোকে ছাড়া জীবনটা শূন্য।”

কিন্তু পলাশ চুপ থেকেছে।

তখন বুঝে উঠতে পারেনি, তার চুপ থাকা একটা সম্পর্ককে ধীরে ধীরে শেষ করে দিতে পারে।


---

💔 নতুন বাস্তবতা: জুই এখন অন্যরকম...


আজ জুই শহরের এক নামী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তার জীবন গুছানো, সে এখন পরিবারের দায়িত্ব নেয়, আত্মীয়দের সাহায্য করে, এমনকি এলাকার গরিব মেয়েদের পড়ালেখার খরচও দেয়।

সে পলাশের কথা ভাবে না – অন্তত বাইরের কেউ তা টের পায় না।


কিন্তু একা রাত হলে, পিলোতে মুখ গুঁজে কাঁদে।

“তুই তো কথা দিয়েছিলি, শেষ বৃষ্টির দিনেও পাশে থাকবি।”

আজ সেই বৃষ্টি নামে আবার।




আজকের ৭ সুন্নাত ও আমল



---

🚶 পলাশ ফিরে এলো… কিন্তু দেরি হয়ে গেছে কি?


ছয় মাস পর হঠাৎ একদিন জুই একটি মেলার স্টলে বসে। সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে সে ছিল একজন প্রশিক্ষক। হিজাব পরে পরিপূর্ণ Islamic অথচ আধুনিক স্টাইলে দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটি।

হঠাৎ সে দেখল—দূর থেকে কেউ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

জুই চোখ তুলে তাকাতেই কিছুটা সময় থমকে গেল...

পলাশ!

তাকে দেখে জুইয়ের হৃদয়ে যেন একসাথে কষ্ট আর আরাম ঢেউ খেলে গেল।

কিন্তু মুখে ছিলো নিরপেক্ষ অভিব্যক্তি।

পলাশ এগিয়ে এসে বললো –
“তুই অনেক বদলে গেছিস। খুব সুন্দর লাগছে।”

জুই মুচকি হেসে বলল,
“মানুষ বদলায়। সময় তাকে বদলে দেয়।”


---

🧠 পলাশের মনজুড়ে শুধুই অতৃপ্তি...


পলাশ নিজের অজান্তেই বলতে থাকে,
“আমি ভুল করেছিলাম। পরিবার, ভয়, সমাজ – এসবের মধ্যে তোর কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোকে আজও ভালোবাসি।”

জুই এবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে জবাব দেয় –

“ভালোবাসা কখনো অন্য কাউকে ভেঙে দিয়ে হয় না। আমি আজও তোকে দোষ দেই না। কারণ তোকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু এখন আমি নিজেকে ভালোবাসি। তাই নিজের সম্মানকেই বেশি গুরুত্ব দিই।”


পলাশ চুপ।

এবার সে বুঝতে পারে – জুই শুধু বড় হয়নি, সে ভিতরে ভিতরে এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছে, যেখানে পুরনো সম্পর্কগুলো আছে শুধু স্মৃতির ঘরে।


---

🕯️ তারা বসেছিল কিছুক্ষণ…


মেলার শেষ প্রান্তে একটা ছোট টেবিলে তারা বসেছিল দু’জন। চারপাশে লাইটিং, মানুষের ভিড়, কিন্তু তাদের মাঝে ছিল কেবল নিরবতা।
পলাশ বলতে থাকে –

“তুই যদি আবারও একটা সুযোগ দিস, আমি সব কিছু ঠিক করে ফেলতে চাই।”


জুই মাথা নাড়ল ধীরে।

“সব কিছু ঠিক করতে চাইলে অনেক আগে করতে পারতি। আমি সেই জুই আর নেই যে তোকে পেয়ে জীবন সুন্দর মনে করত। এখন আমি জানি, আমার সুখ কারো সঙ্গে নয়, বরং আল্লাহর কাছে।”



---

🤲 দোয়া, বৃষ্টি আর বিদায়...


জুই বলল –
“আজকে বৃষ্টি হচ্ছে, তুই বৃষ্টির ভালোবাসা জানতিস। মনে আছে?”

পলাশ বলল –
“হ্যাঁ, বৃষ্টির ফোঁটা তোকে স্পর্শ করলে তুই চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে...”

জুই এবার চোখে জল নিয়ে বলল –
“আজ সেই বৃষ্টি পড়ে, কিন্তু তোকে আর আমার ছায়া পড়ে না। আমি তোর জন্য দোয়া করি – তুই যেন ভালো থাকিস। কিন্তু আমার জীবনে আর কখনো ফিরে আসিস না।”

পলাশ এবার বুঝে গেল, সত্যিকারের ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া নয় – বরং ভালোবেসে কাউকে যেতে দেওয়াও এক ধরনের ভালোবাসা।



🌿 জীবন বদলায়, স্মৃতি নয়...

বৃষ্টির পরে রাস্তায় ছোট ছোট কাঁদামাখা গন্ধ ভেসে আসে।

জুই একা হেঁটে যাচ্ছে, মন শান্ত, চোখে অল্প জল।

পলাশকে দেখা হলো, কথা হলো, কিন্তু যে ‘মিলন’ সে এক সময় চেয়েছিল – সেটা আজ অসম্ভব।

কেন?

কারণ সময় কাউকে থামে না। জুই এখন আল্লাহর দিকে ফিরে গেছে। তার জীবনের আলো এখন ইবাদতে, কুরআনে, পরিবারে, দায়িত্বে।

সে জানে – ভালোবাসা মানুষকে বড় করে, আর ত্যাগ মানুষকে সম্মানিত করে।


---

💔 পলাশ এখন কারো নয়...


পলাশ ফিরে গেছে, কিন্তু আর কিছুতেই আগের মতো মন জুড়াতে পারে না।
পৃথিবীর সবকিছু সে পেতে পারে, কিন্তু জুইকে নয়।
প্রতিদিন রাতে সে পুরোনো মেসেজ পড়ে, জুইয়ের ছবি দেখে আর ভাবে –
“ভুলটা কোথায় হয়েছিল?”

সে বুঝে যায়, একটা মেয়ের সম্মান যদি তুমি প্রথমেই রক্ষা না করো, তার ভালোবাসা ধরে রাখাও অসম্ভব।

সে বারবার আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে –

“হে আল্লাহ, আমি জুইকে হারিয়ে ফেলেছি। তুমি অন্তত তাকে সুখ দিও, রক্ষা করো...”






আ দিয়ে মেয়েদের নাম



---

🕌 জুই এখন নতুন পথে...


জুই এখন প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে,
সে কুরআনের অর্থ পড়ে চোখে জল ফেলে।
আল্লাহর কাছে বলে –
“হে প্রভু, যাকে আমি ভালোবেসেছি তাকে তুমি ভালো রেখো, কিন্তু আমাকে কখনো আর ফিরে যেতে দিও না অতীতে।”
জুই এখন জানে – ভালোবাসা শুধু মানসিক টান নয়, বরং আত্মার শুদ্ধি।
তাই সে নতুন জীবন শুরু করেছে।
সে একটা মাদরাসার বাচ্চাদের জন্য “নামাজ শিক্ষা প্রজেক্ট” শুরু করেছে, নিজের বেতন থেকে।
একদিন হয়তো কেউ তাকে ভালোবাসবে – তার ঈমানের জন্য, চরিত্রের জন্য, কুরআনের জন্য।
তবে পলাশ আর নয়।


---

🎇 গল্পের শেষ: বৃষ্টি পড়ে, মনের ভিতরে নয়


বৃষ্টি এখনো পড়ে।
কিন্তু আজ সেই বৃষ্টিতে কোনো স্মৃতি জাগে না জুইয়ের মনে।

সে জানে—
👉 “যে সম্পর্ক আল্লাহর জন্য ছিল না, তা কখনোই স্থায়ী হয় না।”
👉 “ভালোবাসা তখনই টেকে, যখন সম্মান ও আত্মমর্যাদার সাথে হয়।”

পলাশ একা, কিন্তু সে এখন জুইকে দোয়া করে।
জুই একা নয় – কারণ আল্লাহ এখন তার সঙ্গী।


🌙 পলাশের নতুন জীবন...


পলাশ কিছুতেই পারছিল না জুইকে ভুলে থাকতে।
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত – কিছু একটা যেন ভেতরে পুড়ছিল।
সে একসময় হঠাৎই একটা ওয়াজ মাহফিলে যায়।
সেখানে হুজুর বলছিলেন—

> “যে নারী বা পুরুষকে হারিয়ে তুমি কান্না করো, হয়তো সে ছিল তোমার পরীক্ষার মাধ্যম, নয়তো তোমার থেকে কোনো ফিতনা সরিয়ে দেওয়ার কারণ।”



সেদিনের পর থেকে পলাশ একটানা ফজরের জামাআতে যেতে শুরু করে।
সে জানে না জুইকে সে আর পাবে কিনা,
কিন্তু সে এখন বুঝে গেছে—
আল্লাহর প্রেমই চূড়ান্ত প্রেম।


---

📚 জুই: ইলমের পথে...


জুই নিজেও থেমে থাকে না।
সে ভর্তি হয় এক ইসলামিক অনলাইন কোর্সে – “মাকাসিদুশ শারিয়াহ”
সে জানে, নারী হিসেবে তার সম্মান ও মর্যাদা কীভাবে সংরক্ষিত ইসলামেই রয়েছে।
সে বলে—

> “যে প্রেম আমাকে আল্লাহ থেকে সরিয়ে দেয়, সেটা প্রেম নয়, সেটা ধোঁকা।
আর যে প্রেম আমাকে আল্লাহর পথে আনে, সেটাই জান্নাতের সিঁড়ি।”




---

🕯️ একত্রে দোয়া, আলাদা রাস্তা


এক রাতে, তাহাজ্জুদের সময়...
দুইটি মানুষ দুই জায়গা থেকে আল্লাহর কাছে কাঁদে।

জুই বলে—
“হে আল্লাহ, তাকে হিদায়াত দাও। আমার হৃদয় তুমি পূর্ণ কর দীন দিয়ে।”
পলাশ বলে—
“হে প্রভু, আমি দেরি করেছি, ভুল করেছি।
তুমি জুইর ভালো করে দাও, আর আমাকে এমন বানাও, যেন আমি তেমন কাউকে পেতে পারি যার হৃদয় তোমার দিকে।”

তারা দুইজন হয়তো আর কখনো মিলবে না,
কিন্তু তাদের দোয়া হয়তো এক হয়ে জান্নাতে পৌঁছে যাবে।







জুমার দিনের করনীয়



---

💡 পাঠকের জন্য বার্তা:


এই গল্প শুধু প্রেমের নয়।
এটা সেইসব ছেলেমেয়েদের জন্য, যারা সম্পর্কের নামে নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে।
যারা ভাবে প্রেম মানেই চ্যাট, ডেট, গিফট, ছোঁয়া – না!
প্রেম মানে হলো:

কাউকে এমনভাবে চাই, যেন সে জান্নাতে নিয়ে যায়

কেউ যদি হারিয়েও যায়, তাকে ঘৃণা নয় বরং দোয়া করি

এবং নিজের আত্মাকে গড়ি আল্লাহর দিকে