Labels

Main Tags

আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর শান ও মর্যাদা – দ্বিতীয় খণ্ড


আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর শান ও মর্যাদা 





🔹 ভূমিকা

নবুওতের সাগরের মুক্তা, রহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ ﷺ – তিনি এমন এক মহামানব, যার শান ও মর্যাদা বোঝাতে দুনিয়ার ভাষা অক্ষম। ১ম খণ্ডে আমরা প্রাথমিক কিছু আলোচনায় গিয়েছিলাম। এখন তাঁর মর্যাদার গভীরে ডুব দিবো আল কুরআন, সহীহ হাদীস ও উম্মতের আচরণে।


---

🔸 ১. আল্লাহ্‌র দরবারে নবীজী ﷺ এর শান

🕋 কুরআনে নবীজী ﷺ কে 'রহমত' বলা হয়েছে:

> وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“আমি আপনাকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।”
📖 (সূরা আল-আনবিয়া: ১০৭)



💬 এখানে "আল-আলামীন" মানে শুধু মানুষ না, বরং জিন, ফেরেশতা, পশু-পাখি, প্রকৃতি — সব কিছু। নবীজীর রহমত কেবল উম্মত বা আরব জাতির জন্য ছিল না।


---

📖 কুরআনে নবীজীর সম্মানজনক সম্বোধন:

আদম (আ), নূহ (আ), ঈসা (আ) — কুরআনে নাম নিয়ে ডাকা হয়েছে।
কিন্তু আল্লাহ্ নিজে আমাদের নবীকে কখনো “ইয়া মুহাম্মাদ” বলেননি।

➤ বরং বলেন:

> يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ
“হে নবী!”
📖 (সূরা আল-আহযাব: ১)







---

🔸 ২. ফেরেশতারা যাঁর উপর দরূদ পাঠ করে


> إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবী (সা.)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন।”
📖 (সূরা আল-আহযাব: ৫৬)



🟢 এবার আপনি নিজেই ভাবুন,
🔹 ফেরেশতারা যার উপর দরূদ পাঠ করে
🔹 আল্লাহ্‌ নিজেই যাঁর শানে দরূদ পাঠ করেন
তার মর্যাদা কোথায় পৌঁছেছে?


---

🔸 ৩. নবীজীর নামের মর্যাদা ও ‘মুহাম্মাদ’ নামের মাহাত্ম্য

> مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ
“মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল।”
📖 (সূরা আল-ফাতহ: ২৯)



🌟 "মুহাম্মাদ" শব্দের অর্থই হচ্ছে "অত্যধিক প্রশংসিত"।

🔸 কিয়ামতের দিন যখন সব নবী বলবেন "নাফসি নাফসি", তখন নবীজী ﷺ বলবেন:
“আম্মাতি! আম্মাতি!” – ‘আমার উম্মত! আমার উম্মত!”
(সহীহ মুসলিম)


---

🔸 ৪. সাহাবিদের দৃষ্টিতে নবীজীর মর্যাদা

☀️ সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর ভালোবাসা:

হযরত উরওয়া ইবন মাসউদ (এক কাফির প্রতিনিধি ছিলেন, পরে মুসলিম হন),
তিনি বলেন:

> “আমি কিসরার দরবার, কায়সারের দরবার, নাজাশীর দরবার দেখেছি,
কিন্তু মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবিরা তাঁদের নবীর জন্য যা করেন, তা কোনো বাদশাহের জন্য কেউ করেনি।”
📚 (বুখারী, হুদাইবিয়ার ঘটনা)




---


🔸 ৫. নবীজীর মুখ মোবারক দেখতে না পেরে সাহাবারা কাঁদতেন


হযরত বিলাল (রা.) নবীজীর ইন্তিকালের পর যখন মদীনায় ফিরে আজান দিতেন,
"আশহাদু অন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে থেমে যেতেন।
– পুরো মদিনা কাঁদতে থাকত।


---

🔸 ৬. নবীজী ﷺ এর মর্যাদা কিয়ামতের দিন

✅ ১ম মানুষ যার জন্য কবর ফাটবে:

নবীজী ﷺ

✅ ১ম যার জন্য সুপারিশের দরজা খুলবে:

নবীজী ﷺ

✅ ‘মাকামে মাহমুদ’ যাঁকে দেয়া হবে:

> “তাঁকে একটি মহাপরাক্রমশালী স্থান (মাকামে মাহমুদ) দেয়া হবে।”
📖 সূরা ইসরা: ৭৯




---

🔸 ৭. ওম্মতের প্রতি নবীজীর শফাআত ও দয়া

হাদীস:

> “প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতের জন্য একটি দোয়া করেছেন।
আমি আমার দোয়া আখিরাতে উম্মতের জন্য জমা রেখেছি।”
📚 (বুখারী)



📌 এটা প্রমাণ করে তিনি উম্মতের প্রতি কতটা দরদী ছিলেন।


---

🔸 ৮. সাহাবিদের শেষ ইচ্ছা ছিল নবীজীর পাশে থাকা

হযরত আবু বকর (রা.) বলেছিলেন,
“আমার জান্নাত একটাই, আমি যেন রাসূলের পাশে থাকি।”

উমর (রা.) শহীদ হওয়ার আগেই বলেন:

> “আমার লাশ যেন নবীজী ও আবু বকরের পাশে রাখা হয়।”



🔸 এবং নবীজীর পাশে এখন তাঁরা ঘুমিয়ে আছেন — রওজা শরীফে।


---






🔸 ৯. নবীজীর রওজা মোবারক ও মদীনার মর্যাদা

> “যে ব্যক্তি মদীনার কষ্ট সহ্য করে, সে আমার শাফাআতের যোগ্য হয়ে যায়।”
📚 (তিরমিযি)



🕌 আজও কোটি মুসলমান তাঁর রওজা মোবারক দেখতে যেতে চায়।


---

🔸 ১০. উম্মতের দায়িত্ব — নবীজীর মর্যাদা রক্ষা করা

🔺 আজকের দিনে:

কেউ রাসূল ﷺ কে নিয়ে ব্যঙ্গ করে

কেউ কার্টুন বানায়

কেউ সম্মান দিতে লজ্জা পায়


❗ কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হলো:

1. দরূদ শরীফ পড়া


2. নবীজীর সীরাত চর্চা করা


3. তাঁর সুন্নাহ মানা


4. তাঁর শানে কটূক্তি হলে প্রতিবাদ করা


5. মানুষকে তাঁর মর্যাদা বোঝানো


💠 উপসংহার:

নবীজী ﷺ এর শান ও মর্যাদা এত উচ্চ, যেটা মানুষের ভাষা দিয়ে পুরো প্রকাশ করা যায় না।
আল্লাহ্ স্বয়ং তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন, ফেরেশতারা দরূদ পাঠ করেন, এবং উম্মত চোখের পানি ফেলেন – শুধু তাঁর ভালোবাসায়।