❤️ লিজা ও সুমনের প্রেমের গল্প | পর্ব-২ | নতুন মোড় ও বাস্তবতার সংগ্রাম
🌸 ভালোবাসা মানেই কি শুধু সুখ?
ভালোবাসা এক অদ্ভুত অনুভূতি। কখনও সে হাসায়, কখনও কাঁদায়। কখনও মনের আকাশে ইন্দ্রধনু আঁকে, কখনও অঝোর বৃষ্টিতে মন ভিজিয়ে দেয়। ঠিক এমনই অদ্ভুত এক প্রেমকাহিনি লিজা ও সুমনের। গত পর্বে আমরা জেনেছিলাম, কীভাবে এক অজানা বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছিল গভীর ভালোবাসায়। এবার তাদের জীবনে আসছে নতুন বাঁক, নতুন পরীক্ষা।
🌧️ মেঘলা সকালে অস্থিরতা
সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা নেই। চারদিকে সুনসান নীরবতা। হঠাৎ হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। জানালার পাশে বসে লিজা একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। তার হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা, কিন্তু মন অন্য কোথাও।
সাধারণত প্রতিদিন সকালবেলায় সুমনের ফোন না পেলে লিজার দিন শুরু হতো না। অথচ আজ সকাল থেকে সুমনের কোনো খোঁজ নেই। ফোন করেছে, মেসেজ দিয়েছে, কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না। এমনটা আগে কখনও হয়নি।
মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন, হাজার শঙ্কা ভর করছে।
"সুমনের কিছু হলো না তো?"
"কোনো ঝামেলায় পড়েনি তো?"
"আমাকে ইগনোর করছে না তো?"
এইসব ভাবনায় লিজা আরও অস্থির হয়ে উঠল।
---
📱 হঠাৎ ফোন কল ও অভিমানের বহিঃপ্রকাশ
বিকেলের দিকে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল— "সুমন কলিং…"
লিজার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। ফোন ধরেই অভিমানী কণ্ঠে বলল—
– কোথায় ছিলে এতক্ষণ? জানো, আমার মন কতটা অস্থির হয়ে উঠেছিল?
সুমনের কণ্ঠেও ক্লান্তি। সে বলল—
– আমি তোমার অনুভূতি বুঝি লিজা। আজ একটু ব্যস্ত ছিলাম, অফিসে জরুরি মিটিং ছিল। কিন্তু তোমাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না।
লিজা কিছুটা শান্ত হলো। তবুও মনের কোণে অভিমান জমে রইল।
– ব্যস্ত থাকতে পারো, কিন্তু একটা মেসেজ দিতে কি এত কঠিন? — বলল লিজা।
– আমি ঠিক বলেছি। আমার ভুল হয়েছে। আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভুলিনি। — সুমনের কণ্ঠে গভীর আন্তরিকতা।
---
🎁 সারপ্রাইজের ঘোষণা ও রহস্য
হঠাৎ সুমন বলল—
– তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। কাল বিকেলে সময় পাবে তো? একটা বিশেষ কথা বলব।
লিজা অবাক। মন আবার দৌড়াতে শুরু করল। সারারাত ঘুম হলো না। হাজারো চিন্তা, হাজারো কল্পনা—
"সারপ্রাইজ কী? নতুন কোনো পরিকল্পনা? আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলবে? না কি অন্য কিছু?"
---
☕ ক্যাফেতে বিশেষ মুহূর্ত
পরদিন বিকেল। লিজা অনেক গুছিয়ে, মন দিয়ে সাজগোজ করে নির্ধারিত ক্যাফেতে গেল। সুমন আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিল। তার হাতে ছোট একটা গিফট বক্স।
লিজার চোখে লেগে ছিল উত্তেজনা আর ভয়।
সুমনের চোখে গভীর ভালোবাসা। সে বলল—
– এটা শুধু গিফট না, এটা আমার মনের অনুভূতি।
লিজা অবাক হয়ে বক্স খুলল। ভেতরে ছিল একটি আংটি আর ছোট্ট একটা নোট—
"Will you hold my hand forever?"
"তুমি কি সারাজীবনের জন্য আমার হাত ধরে রাখবে?"
---
❤️ ভালোবাসার অঙ্গীকার
লিজার চোখে জল চলে এলো। সে বলল—
– আমি সারাজীবনের জন্য তোমার হাত ধরে রাখতে চাই। তুমি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।
সুমনের চোখও ভিজে উঠল। সে বলল—
– তুমি শুধু আমার প্রেমিকা না, তুমি আমার জীবন, আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ।
সেদিনের পর থেকে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলো। প্রেমের বন্ধন শক্ত হলো, বিশ্বাস আরও গভীর হলো। ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমান থাকলেও তাদের ভালোবাসা অটুট থাকল।
---
🏠 পরিবারের বাঁধা ও সমাজের প্রশ্ন
কিন্তু প্রেমের পথে সব সময় ফুল বিছানো থাকে না। আস্তে আস্তে বাস্তবতার কাঁটা সামনে আসতে শুরু করল।
লিজার পরিবার:
লিজার পরিবার এখনো সুমনের প্রতি পুরোপুরি আশ্বস্ত নয়। তাদের ধারণা, সুমন স্থায়ী চাকরি না করলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সমাজের কথা, আত্মীয়-স্বজনের কথা মাথায় রেখে তারা লিজার জন্য অন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করল।
সুমনের পরিবার:
সুমনের পরিবারও চায়, সে আগে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলুক। বিয়ে বা সম্পর্ক নিয়ে ভাবার সময় এটা নয়— এমনটাই তাদের বক্তব্য।
সমাজের কটাক্ষ:
চারপাশে নানা কথা ভাসছে। কেউ বলছে— "এত ছোট বয়সে প্রেম ঠিক নয়", কেউ আবার বলছে— "ছেলেটার কিছু নেই, মেয়েটা বিপদে পড়বে।"
এসব কথায় লিজা-সুমনের মন কিছুটা ভেঙে পড়ছিল, কিন্তু ভালোবাসা ছিল তাদের শক্তি।
---
💪 ভালোবাসার জন্য সংগ্রাম
সুমন প্রতিজ্ঞা করল, সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। চাকরি, ক্যারিয়ার, সব গুছিয়ে নেবে। যাতে লিজার পরিবারের কাছে সে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে।
লিজা প্রতিজ্ঞা করল, সে সুমনের পাশে থাকবে। সমাজের কথা, পরিবারের চাপ—সব কিছু উপেক্ষা করে ভালোবাসাকে অটুট রাখবে।
---
🕰️ সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই
সময় বয়ে চলল।
সুমন পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা শুরু করল। দিনরাত পরিশ্রম, ইন্টারভিউ, আবেদন—সব কিছুতেই সে লেগে রইল।
লিজা নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেল। মাঝেমধ্যে সুমনের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো, কিন্তু সময়ের অভাবে সম্পর্কের সেই ঘনিষ্ঠতা কিছুটা কমে গেল।
তবে তাদের বিশ্বাস, ভালোবাসার আসল পরীক্ষা এখনই।
---
💔 পরীক্ষার মুহূর্ত
একদিন লিজার পরিবার সরাসরি জানিয়ে দিল—
– আমরা তোমার জন্য অন্য পাত্র দেখছি। সুমনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
লিজার মন ভেঙে গেল। সে প্রতিবাদ করল—
– আমি সুমন ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না। আপনারা যদি সময় দেন, সুমন নিজেকে প্রমাণ করবে।
পরিবারের মধ্যে উত্তপ্ত পরিবেশ। একদিকে পরিবারের মান-সম্মান, অন্যদিকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি।
---
🌟 আত্মবিশ্বাস ও নতুন পথ
সুমনও দমে গেল না। সে লিজাকে বলল—
– আমি তোমার পরিবারের কথা বুঝি। তুমি আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। আমি নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাব, যেখানে কাউকে আমাকে নিয়ে সন্দেহ করতে হবে না।
এভাবেই শুরু হলো বাস্তব জীবনের সংগ্রাম। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার সম্পর্ক এখন শুধুই আবেগ নয়, এটা এখন জীবন যুদ্ধের অংশ।
---
🎯 লক্ষ্য স্পষ্ট
সুমনের লক্ষ্য— স্থায়ী চাকরি, নিজের পরিচিতি তৈরি, পরিবারকে রাজি করানো।
লিজার লক্ষ্য— পড়াশোনা শেষ করা, নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরি করা, ভালোবাসাকে ধরে রাখা।
তাদের গল্প যেন বাস্তবতার মঞ্চে নতুন অধ্যায় রচনা করছিল।
---
🌸 উপসংহার
ভালোবাসা শুধু মিষ্টি কথা নয়, ভালোবাসা মানে—
✅ একে অপরের পাশে থাকা।
✅ বিপদের সময় সাহস দেওয়া।
✅ পরিবারের সম্মান রক্ষা করা।
✅ নিজের অবস্থান তৈরি করা।
✅ সমস্ত বাধা জয় করে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া।
---
🔥 পরবর্তী পর্বে কী ঘটবে?
সুমনের সংগ্রাম সফল হবে?
লিজার পরিবার মেনে নেবে?
সমাজের বাঁধা পেরিয়ে তারা কি এক হবে?
নাকি গল্পের মোড় অন্যদিকে যাবে?
👉 জানতে হলে অপেক্ষা করুন— "লিজা ও সুমনের প্রেমের গল্প | পর্ব-৩"-এর জন্য।
Join the conversation