Labels

Main Tags

আগে থেকে জেনে নিন আশুরার সকল বিষয় | আশুরার ইতিহাস, ফজিলত, করণীয়

আপনি কি জানেন, এমন একটি দিন আছে যা বদলে দিয়েছে মানব ইতিহাসের ধারা?
একটি দিন, যেখানে জড়িয়ে আছে সত্য, ত্যাগ আর বীরত্বের অনন্য উদাহরণ।
আশুরা মানে শুধু কারবালার কান্না নয়, বরং ন্যায় আর অন্যায়ের চিরন্তন লড়াইয়ের প্রতীক।
অনেকেই জানে এই দিনের শোকের দিক, কিন্তু সত্যিকার ইতিহাস কি সবার জানা?
আপনি কি জানেন আশুরার সঙ্গে নবী মূসা (আ.) থেকে শুরু করে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বীরত্ব পর্যন্ত কত কিছু জড়িয়ে আছে?
এই দিনেই আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছেন অনেক নবীকে, ধ্বংস করেছেন জালিমদের।
মুহাররমের ১০ তারিখে শুধু কান্না নয়, আছে সাহসের অপরিসীম শিক্ষা।
আশুরার দিনে রোজা রাখলে কি পুরনো গুনাহ মাফ হয়— আপনি কি নিশ্চিত?
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা কীভাবে আমাদের ন্যায়পরায়ণতা শিখায়, সেটা কি জানেন?
আজ আমরা জানবো আশুরার সব সত্য, ইতিহাস, শিক্ষা, ফজিলত ও করণীয় — নতুন চোখে।

---

🌙 আগে থেকে জেনে নিন আশুরার সকল বিষয় | সম্পূর্ণ বাংলা বিশ্লেষণ | ছবি সহ


---

আশুরার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

"আশুরা" শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ দশ। প্রতি বছর ইসলামের প্রথম মাস মুহাররমের দশম দিনে আশুরা পালিত হয়। এই দিন মুসলিম ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়।

মুহাররম মাসকে বলা হয় "আল্লাহর মাস", কারণ এতে জড়িয়ে আছে অনেক নবী-রাসূলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো কারবালার হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি।


---

আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে:

✅ হযরত মূসা (আ.) ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পায়।
✅ হযরত নূহ (আ.)-এর কিস্তি তুফান শেষে নিরাপদে স্থলভাগে ভিড়ে।
✅ হযরত ইব্রাহিম (আ.) আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে অক্ষত থাকেন।
✅ হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।
✅ হযরত ঈসা (আ.) আকাশে উত্তোলিত হন।
✅ সর্বশেষ, ৬১ হিজরিতে, কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত ঘটে।

এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আশুরা শুধু শোকের নয়, বরং আল্লাহর কুদরতের দিনও বটে।


---

কারবালার ঘটনা ও ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগ

ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত আশুরার ঘটনা হলো কারবালা যুদ্ধ। ইয়াজিদ নামে এক জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)।

ইমাম হোসাইন (রা.) কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। তিনি সত্য, ইনসাফ ও ইসলামের মূলনীতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।

৬১ হিজরি, মুহাররমের ১০ তারিখ, কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পরিবারসহ ৭২ জন শহীদ হন। অত্যাচার, অবরোধ, পানির নিষেধাজ্ঞা—সব সয়ে তিনি মাথা নত করেননি।

কারবালা আমাদের শেখায়: সত্যের পথে চলতে কষ্ট হবে, ত্যাগ দিতে হবে, তবুও অন্যায়ের সামনে নতি স্বীকার করা যাবে না।


---

আশুরার ফজিলত ও গুরুত্ব

আশুরার দিনে ইবাদত-বন্দেগী অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিস শরীফে আশুরার ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ আছে:

✅ রাসূল (সা.) বলেন:
“আমি আশাবাদী, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহ মাফ করায়।”
(সহীহ মুসলিম)

✅ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবীদেরও উৎসাহিত করতেন।

✅ এই দিনে বেশি বেশি দোয়া, তওবা, কোরআন তেলাওয়াত ও দান-সদকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।


---

আশুরার করণীয়

এই পবিত্র দিনে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করা উচিত, যেমন:

✔️ আশুরার রোজা রাখা (৯ ও ১০ মুহাররম অথবা ১০ ও ১১ মুহাররম)।
✔️ বেশি বেশি নফল ইবাদত ও কোরআন তেলাওয়াত করা।
✔️ দান-সদকা করা এবং অসহায়দের সাহায্য করা।
✔️ তওবা ও ইস্তেগফার করা।
✔️ ইসলামি শিক্ষা, বিশেষ করে কারবালার সঠিক ইতিহাস জানা।


---

আশুরার নিষিদ্ধ কাজ

ইসলাম আশুরার দিন বাড়াবাড়ি বা বিদআত নিরুৎসাহিত করেছে। যেমন:

❌ নিজের শরীর আঘাত করা বা রক্তপাত ঘটানো।
❌ অতি বাড়াবাড়ি করে মাতম বা শোক পালনের নামে অশালীন আচরণ।
❌ ইতিহাস বিকৃত করা বা ভুল তথ্য প্রচার করা।

আশুরা আমাদের শিক্ষা দেয় শান্তি, ধৈর্য, আত্মত্যাগের আদর্শ। তাই যথাযথভাবে দিনটি পালন করা উচিত।


---

আশুরার সাথে সম্পর্কিত কিছু ছবি









আশুরার শিক্ষা ও বার্তা

আশুরা মানে শুধু শোকের দিন নয়; এটি ত্যাগ, সাহস, সত্য, ন্যায়পরায়ণতা এবং ইসলাম রক্ষার শিক্ষা দেয়। কারবালার শহীদদের স্মরণ আমাদের দায়িত্ব, যাতে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি।

আশুরার দিনে আমাদের উচিত: নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ করা, পরিবার-সমাজে শান্তি বজায় রাখা এবং সঠিক ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া।